Skip to main content

ইসলাম কি?

মানুষ, পশুপাখি, মাছ, গাছপালা, প্রকৃতি, পৃথিবী, চাঁদ, গ্রহ, উপগ্রহ, সৌরজগৎ, নীহারিকা নিয়ে এক মহাআশ্চর্য্য এই বিশ্বভ্রম্মান্ডে যা কিছু আছে, সবকিছু একজন সৃষ্টি করেছেন। সেই সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান ও একজন। তিনি মানুষও নন, বা তাঁর কোন সৃষ্টির মতও নন। তাঁকে কেউ সৃষ্টিও করেনি, তার সন্তানাদিও নেই। তাঁর সমকক্ষ বা তাঁর মত কিছুই নেই। ইসলাম হল তাঁর পাঠানো একটি জীবনযাপন পদ্ধতি যেখানে তাঁকে এক প্রভূ, ঈশ্বর, পালনকর্তা, পরমকরুনাময়, অসীম দয়ালু বলে স্বীকার করে নেয়া হয়। খ্রীষ্ট, বা ইহুদি ধর্মেও সেই একই খোদাকে প্রভু বলে মেনে নেয়া হয়। সেই প্রভুকে আরবিতে ডাকা হয় আল্লাহ নামে। এমনকি ইসলাম, খ্রীষ্ট, ইহুদি ধর্ম তিনটিই একই আল্লাহর পাঠানো। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এক ঈশ্বর এতগুলো ধর্ম দুনিয়াতে পাঠালেন? সেকথায় আসছি একটু পর।

'ইসলাম' শব্দের বুৎপত্তি

ইসলামে আরবি ভাষার একচ্ছত্র প্রাধান্য দেখা যায়। কেন - সেকথায়ও একটু পর আসছি। ইসলাম একটি আরবি শব্দ। এটি এসেছে আরেক আরবি শব্দ 'সালাম' থেকে। সালাম মানে হল শান্তি। ইসলাম মানে হল, প্রভুর কাছে নিজের কামনা, বাসনা, বিবেক, বুদ্ধিমত্তা সমর্পণ করে শান্তি লাভ করা। মুসলমান বা মুসলিম হল এমন একজন যিনি নিজের সত্ত্বাকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণ করেন। ইসলামের লক্ষ্য ও উদ্দশ্য একটিই - তাহলো আল্লাহর কাছে সারেন্ডার করে শান্তি কায়েম করা।

ইসলামের শুরু যেখান থেকে

মজার বিষয় হল অনেকেই মনে করেন ইসলাম খুবই কম বয়স্ক একটি ধর্ম। বিশেষ করে মিডিয়াতে ইসলাম বিস্ফোরনের পর শুধু যে স্বল্পবয়সী ধর্মই নয়, বরং একে একটি বিশেষ সংগঠন বলেও অনেকে ভুল ধারনা করেন। ইসলামের শেষ বার্তাবাহক (মেসেঞ্জার) ছিলেন সৌদি আরবের মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম - এর অর্থ হল মুহাম্মাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সবেতো শুরু হল, ইসলামের পদে পদে শান্তির কথা।)। তিনি জন্মেছিলেন ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে। তাই বলে যে ইসলামের পত্তন সেখান থেকেই হয়েছে একা একদমই ভুল একটি ধারনা। ইসলামের বয়স মানুষের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের একদম গোড়া থেকে। অ্যাডাম ও ঈভ (Adam and Eve) বা আদম ও হাওয়ার কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। আল্লাহ ওনাদের আমাদের আদিবাবা-মা হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। ব্যস - ইসলামের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। ইতিহাসবিদরা বলেন খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ৪০০৪ বছর আগে আদম-হাওয়া এসেছিলেন, বলতে গেলে এখন থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগে। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের হিসাবও তাই।

মহামানবদের আগমন

এরপর ইতিহাস জুড়ে কালজয়ী মহামানবেরা দুনিয়াতে পদার্পন করেছেন। তাদের মধ্যে নূহ (আলাইহিসসাল্লামঃ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক), যাকে বাইবেল বলে নোয়াহ (Noah)। এরপর এসেছেন ইব্রাহিম (আঃ) বা Abraham, ইয়াকুব (আঃ) বা Jacob, দাউদ (আঃ) বা David, মূসা (আঃ) বা Moses, ঈসা (আঃ) বা Jesus। এগুলো কোন গালগল্প নয় - বরং একদম ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং ইহুদি, খ্রীষ্টান, মুসলমান নির্বিশেষে সবাই এদেরকে বিশ্বাস করে। ডেভিড বনাম গোলিয়াথের গল্প পড়েছেন না? ইনিই সেই দাউদ এবং এই কাহিনী কোরআনেও আছে। কোরআন কি জিনিস একটু পর বলছি। এরা শুধু আল্লাহর নবী ছিলেন বলেই নয়, তাদের সুপার-হিউম্যান গুনাবলীর জন্য তারা সময়কে জয় করেছেন; যার ফলে লিপিবদ্ধ ইতিহাসে তাদের অত্যন্ত বিশদভাবে ও গুরুত্বের সাথে ঠাঁই হয়েছে। ভাল কথা - এতক্ষনতো আল্লাহর নবীদের কথা অনেক বললাম। নবীরা হলেন আল্লাহর পছন্দ করা ধর্মপ্রচারক। এদের কাউকে কাউকে আল্লাহ তাদের গোত্রের জন্যে জীবনযাপনের ম্যানুয়েল দিয়েছেন। এগুলোকে ধর্মগ্রন্ধ বলে। ইসলামের কাল পরিক্রমায় ৪টি বড়সড় ধর্মগ্রন্ধ ছিল। দাউদ (আঃ) পেয়েছিলেন 'যাবুর' বা Psalms নামের গ্রন্ধ, মূসা (আঃ) পেয়েছিলেন 'তাওরাত' বা Torah আর ঈসা (আঃ) 'ইঞ্জিল' বা Gospel। যারা ধর্মগ্রন্ধ আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছেন তাদের নবীর পাশাপাশি রাসূল বা আল্লাহর বার্তাবাহক (messenger) ও বলা হয়ে থাকে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) তেমনই একজন নবী ও রসূল ছিলেন। তবে তিনি একদম শেষ নবী ও রসূল এবং তিনি পেয়েছেন 'কোরআন' নামের আল্লাহর একটি গ্রন্ধ। তিনিই শেষ, এরপর আর কোন রাসূল বা ধর্মগ্রন্ধ আল্লাহ আমাদের কাছে পাঠাবেন না।

আল্লাহ কেন এত নবী আর ধর্মগ্রন্ধ পাঠিয়েছিলেন?

মানুষ সুযোগ ফেলেই ফাঁকি মারে। ছাত্র বয়সেও, দৈনন্দিন জীবনেও। কেন সেটাও আরেক গল্প। অন্য একটা লেখায় বিশদ আলোচনা করবো। মানুষ সুযোগ পেলেই তার প্রভুকে ভুলে যেত, ভুলে যেত কি উদ্দেশ্যে তাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ বার বার নানা জেনারেশনে, নানা গোত্রের মানুষের কাছে তার বাণী পাঠিয়েছিলেন। নবীরা ছিলেন মাধ্যম। ৬০০০ বছর ধরে প্রভূত মানব উন্নয়নের চরম শিখরে আমরা এই মূহুর্তে আছি। এই পর্যায়ের জ্ঞান ভান্ডার, বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা আসতে হাজার হাজার বছর লেগে গেছে। কিন্তু ভেবে দেখুন একদম প্রথম দিককার মানুষগুলোর কথা। তাদের বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত ছিল। তাই তাদের কাছে পাঠানো গ্রন্ধগুলোও খুব সীমিত পর্যায়ের ছিল। যেন সেসময়ের মানুষের কাছে কঠিন না হয়ে যেত। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি জানেন কোন জেনারেশনের মানুষ কতটুকু নিতে পারবে। কিন্তু ৬০০০ বছরে মানুষের সংখ্যাও বিশ্বব্যাপী এত বেড়ে গেল। ভেবে দেখুন মাত্র দু'জন থেকে এখন প্রায় ৭ বিলিয়ন - ব্যাক্টেরিয়ার চেয়ে কোন অংশে কম আমরা বংশবিস্তার করিনি! আল্লাহ এসবই জানতেন। তাই, ১৪০০ বছর আগে অসাধারন ক্যারিশম্যাটিক একজনকে সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যাও এখন থেকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমার যে বাণী ভ্যালিড থাকবে সেটা প্রচার করে এসো। তিনিই ছিলেন মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তার ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল 'কোরআন।' কোরআন চিরকালের জন্য সমস্ত মানবজাতির কাছে এসেছে, অন্য গ্রন্ধগুলোর মত কোন বিশেষ সময় বা গোত্রের মানুষের জন্য আসেনি।
কিন্তু যাদের কাছে এই সহজ যুক্তিটা গ্রহনযোগ্য হয়নি এবং কোরআনকে শেষ বাণী হিসেবে গ্রহন না করে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্ধ আকঁড়ে ছিল, তারা রয়ে গেছে সময়ের সাথে ইসলামের ইনভ্যালিড হয়ে যাওয়া অংশগুলোতে। যারা এখনও তাওরাত অনুসরণ করে তারা ইহুদি নামে পরিচিত, যারা ইঞ্জিল তারা খ্রীষ্টান। কিন্তু এই ধর্মগ্রন্ধগুলোকে মানুষ নিজ প্রয়োজনে এতটাই পরিবর্তন করেছে যে মূল গ্রন্ধগুলো আর নেই। কিন্তু কোরআনের একটা বিরাট মিরাকল হল, আল্লাহ প্রতিজ্ঞা করেছেন আমাদের কাছে যে এটার পরিবর্তন হয়ে যাওয়া রক্ষার দায়িত্ব তিনি নিজে নেবেন। এজন্যেই দুনিয়াজুড়ে কয়েক মিলিয়ন কোরআন হাফেজ আছেন, যারা কোরআনের প্রথম শব্দ থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত মুখস্ত করে আসছেন গত প্রায় ১৪০০ বছর ধরে। সম্পূর্ণ অন্ধের মত ইউরোপের একজন কোরআন হাফেজকে পছন্দ করে নিয়ে আসবেন, আমেরিকা থেকে একজন, বাংলাদেশ থেকে, তাদেরকে তিনটি আলাদা রুমে রেখে কোরআন লিখে দিতে বলবেন, তারা কোরআনের ৬৩৪৬টি বাক্য (বা আয়াত) আপনাকে প্রথম শব্দ থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত হুবহু লিখে দেবে, তাদের মাতৃভাষা যেটাই হোক না কেন, তারা যেকোন শিক্ষাস্তর থেকেই আসুক না কেন। পৃথিবীর সব কোরআনের আরবি কপি হুবহু এক।
"আমি আপনাকে (হে মুহাম্মাদ) সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদানকারী (যারা ইসলামের পথে থাকবে তাদের প্রতি) ও সতর্ককারী (যারা ইসলাম গ্রহণ করবেনা তাদের প্রতি) হিসেবে। এমন কোন সম্প্রদায় ছিল না যাদের কাছে সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।" (আল-কোরআন ৩৫:২৪)
সবচেয়ে মজার বিষয় হল, কোরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্ধ যেখানে আল্লাহ মনোনিত ধর্মকে 'ইসলাম' বলা হয়েছে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা হয়েছে। অন্য কোন ধর্মেরগ্রন্ধে তাদের ধর্মের মান বল হয়নি, বা অন্য ধর্ম নিয়েও আলোচনা করা হয়নি।
 
যেখানে আমাদের সৃষ্টিকর্তা নিজেই সবকিছু বলে দিয়েছেন, সেখানে কাকে বিশ্বাস করবো কাকে করবো না, এসব কারন দেখিয়ে ইসলাম থেকে দূরে থাকার কোন যুক্তি নেই।

Comments

Popular posts from this blog

রমাযানের শেষ দশক এবং হাজার মাসের চেয়েও সেরা একটি রাত  ▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সুপ্রিয় ভাই ও বোন, দেখতে দেখতে মাহে রমাযান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকে। সৌভাগ্যবান লোকেরা এ মাসে আঁচল ভরে পাথেয় সংগ্রহ করছে আর হতভাগারা এখনো অন্ধকারের অলি-গলিতে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কল্যাণের বারি বর্ষণ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। বন্ধ হয়ে যায় নি তাওবার দরজা বরং আরও বেশি সুযোগ নিয়ে মাহে রমাযানের শেষ দশক আমাদের মাঝে সমাগত। আজকের এই পোস্টে দেখব আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এতে কী উপহার সাজিয়ে রেখেছেন এবং আমরা কীভাবে তা সংগ্রহ করতে পারব। প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা আল্লাহ দেয়া উপহারগুলো দুহাত ভরে কুড়িয়ে রমাযানকে আরও অর্থ বহ করে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন। 🌀 ১) রমাযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী-পরিবার সহ সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ “রমাযানের শেষ দশক প্রবেশ